g চৌহালী (সিরাজগঞ্জ) সংবাদদাতা
সরকারিভাবে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও চলমান প্রজনন মৌসুমে কোনো রকম নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে সিরাজগঞ্জের চৌহালীর যমুনা নদীজুড়ে ডিমওয়ালা ইলিশ নিধন অব্যাহত রয়েছে। এ মাছের বিস্তার লাভ করতে সরকারের বেঁধে দেয়া ১ অক্টোবর থেকে ২২ অক্টোবর ২২ দিন পর্যন্ত মাছ ধরা বন্ধ থাকার কথা থাকলেও এখানে তার ব্যতিক্রম চিত্র। শত-শত নৌকা নিয়ে জেলেরা দিন-রাত অবাধে ঝাঁকে ঝাঁকে ডিমওয়ালা আর জাটকা ইলিশ মাছ ধরার প্রতিযোগিতায় নেমেছে। এজন্য নির্বিঘ্নে মাছ শিকারে জেলেদের সাথে পুলিশের আতাতের অভিযোগ উঠলেও তা অস্বীকার করেছে থানা পুলিশ। আর পরিস্থিতি মোকাবিলায় সাধ্যানুযায়ী নিজেদের চেষ্টা চালানোর কথা জানিয়েছে স্থানীয় মত্স্য অফিস।
যমুনার চরাঞ্চল ঘেরা দুর্গম জনপদ নদী ভাঙ্গনে বিপর্যস্ত চৌহালী উপজেলার অধিকাংশ অভাবী মানুষের কৃষির পরেই প্রধান পেশা মাছ শিকার। নিবন্ধিত ১২৩৫ জেলেসহ প্রায় দুই সহস্রাধিক জেলের ইলিশ, ঘাইড়া, আইড়সহ নদীর অন্যান্য সুস্বাদু মাছ ধরতে নিষিদ্ধ ক্যারেন্ট জালই হচ্ছে তাদের প্রধান উপকরণ। উমরপুর, বাঘুটিয়া, খাসকাউলিয়া, ঘোরজান, স্থল, সদিয়া চাঁদপুর, খাসপুকুরিয়া ইউনিয়নের এসব জেলে তাদের ছোট-বড় ইঞ্জিনচালিত নৌকা করে দিন-রাত চালিয়ে আসছেন মাছ আহরণের কাজ।
স্থানীয় মত্স্য অফিসের মতে এবার প্রচুর পরিমাণে যমুনায় ইলিশ মিলেছে। যা গত বছরের তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি। সরকারের বেঁধে দেয়া সময়ে ইলিশ মাছ ধরা, পরিবহন, মজুদ ও বিক্রি নিষিদ্ধ থাকলেও চৌহালী উপজেলার যমুনাজুড়ে তার ব্যতিক্রম। বর্তমানে নদীর রূপালী শস্য ডিমওয়ালা ইলিশ মাছ নিধনে মাথা ব্যথা নেই তাদের। বারবালা থেকে পাথরাইল হয়ে দুর্গম শৈলজানা, উমরপুর, মুরাদপুরসহ পুরো নদীজুড়ে চলছে ক্যারেন্ট জাল দিয়ে ইলিশ মাছ শিকারের রমরমা আয়োজন। দ্রুতগতির ইঞ্জিন চালিত নৌকা করে কৌশলী জেলেরা থানা পুলিশের সাথে যোগাযোগ করে অবাধে মাছ শিকার করছে। সরজমিনে এসব এলাকায় গিয়ে ক্যামেরা দিয়ে ছবি তুলতে সাংবাদিকদের দেখেই অতিগতির ইঞ্জিনচালিত বেশ কিছু মাছ ধরা নৌকা নিয়ে পালিয়ে যায় জেলেরা। এসময় চর বিনানইয়ের বৃদ্ধ মোশারফ হোসেন, তার ছেলে আবুসামা, জোতপাড়ার বৃদ্ধ নজর আলী, আবুল কালাম, মাসুদ আলী, বোয়াকান্দির জেলে হাসান আলী জানান, আমাদের জমি জমা যা ছিল তা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। ঋণ করে জাল বানিয়েছি। মাছ ধরেই চলছে তা পরিশোধ এবং পরিবারের সবার আহার। তাই নিষেধাজ্ঞা থাকলেও আমাদের কিছু করার নেই।
এদিকে নানা প্রতিকূলতা থাকালেও ইলিশের প্রসারে সাধ্যানুযায়ী দিন-রাত কাজ করছে প্রশাসন বলে জানান জেলা মত্স্য অফিসার মনিরুল ইসলাম ও চৌহালী উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাদেকুর রহমান এবং নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট (ভূমি) আনিসুর রহমান। তারা জানান, পুলিশের সহায়তায় চৌহালীতে অভিযান চালিয়ে এ পর্যন্ত আটক প্রায় ৮০ হাজার মিটার জাল পোড়ানো হয়েছে। ৫ জেলেকে ১৫ দিনের কারাদণ্ড এবং প্রায় শত মনের মতো মাছ ধরা হয়েছে। নদীর পরিধি বড় হওয়ায় একদিকে অভিযান পরিচালনা করলে আরেক দিক মাছ ধরা শুরু করে অসাধু জেলেরা। তারপরও দিন-রাত আমরা মা ইলিশ রক্ষায় কাজ করছি আমরা।
সুজানগরে ১০ মত্স্যজীবীর কারাদণ্ড, ৫ জনের জরিমানা
এদিকে সুজানগর (পাবনা) সংবাদদাতা জানান, সুজানগর থানা পুলিশ প্রজনন মৌসুমে ইলিশ মাছ রক্ষায় পদ্মা নদীতে অভিযান চালিয়ে ১৫ জন মত্স্যজীবীকে গ্রেফতার করেছে। এদের মধ্যে ভ্রাম্যমাণ আদালত ১০ জনকে ১ মাস করে বিনাশ্রম কারাদণ্ড এবং ৪ জনকে ৫ হাজার টাকা করে ও ১ জনকে ১ হাজার টাকা জরিমানা করে। সোমবার দিনগত রাতে ও মঙ্গলবার সকালে এই অভিযান পরিচালনা করা হয়।