
সমপ্রতি বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনী ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি) পদে লোক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে। এবারের প্রক্রিয়ায় ৮ হাজার ৫’শ জন পুরুষ ও ১ হাজার ৫’শ জন নারী কনস্টেবলসহ সর্বমোট ১০ হাজার লোকবল নিয়োগ দেওয়া হবে। ঢাকা, ময়নসিংহ, চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী, রংপুর, বরিশাল ও সিলেট রেঞ্জে এ নিয়োগ কার্যকর হবে। আবেদনের জন্য যে সকল কাগজপত্র দরকার ও প্রার্থীদের যোগ্যতা কেমন দরকার, বেতন-ভাতাসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার তথ্য নিয়েই আমাদের এবারের ফিচার। বিস্তারিত লিখেছেন মাহবুব শরীফ
উল্লিখিত পদটিতে যোগদানে ইচ্ছুক প্রার্থীদের নিজ জেলার সংশ্লিষ্ট পুলিশ লাইন্স ময়দানে নির্ধারিত তারিখ সকাল ৯টায় শারীরিক মাপ ও পরীক্ষার জন্য উপস্থিত থাকতে হবে। যারা বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীতে কনস্টেবল পদে যোগ দিতে ও দেশসেবা করতে চান, তাদের জন্যই এ সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ।
আবেদনের যোগ্যতা
উল্লিখিত পদটিতে আবেদন করতে হলে প্রার্থীর শিক্ষাগত যোগ্যতা ন্যূনতম জিপিএ ২.৫-সহ এসএসসি বা সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে। শিক্ষাগত যোগ্যতার পাশাপাশি শারীরিক যোগ্যতাও থাকতে হবে। শারীরিক যোগ্যতার ক্ষেত্রে সাধারণ ও অন্যান্য কোটার পুরুষ প্রার্থীদের জন্য উচ্চতা কমপক্ষে ৫ ফুট ৬ ইঞ্চি এবং নারী প্রার্থীদের ক্ষেত্রে ৫ ফুট ২ ইঞ্চি হতে হবে। আর বুকের মাপ পুরুষ প্রার্থীদের ক্ষেত্রে স্বাভাবিক অবস্থায় ৩১ ইঞ্চি ও সমপ্রসারিত অবস্থায় ৩৩ ইঞ্চি হতে হবে। বয়স হতে হবে ১ জানুয়ারি ২০১৮ তারিখে ১৮ থেকে ২০ বছরের মধ্যে। মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানদের ক্ষেত্রে বয়সসীমা ১৮ থেকে ৩২ বছর পর্যন্ত শিথিল যোগ্য। মুক্তিযোদ্ধা কোটায় মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানের সন্তানদের জন্য বয়সসীমা ১৮ থেকে ২০ বছরের মধ্যে। উপজাতীয় কোটার ক্ষেত্রে শারীরিক যোগ্যতা ও বয়সের ভিন্নতা রয়েছে। এছাড়াও প্রার্থীকে অবশ্যই বাংলাদেশের নাগরিক ও অবিবাহিত হতে হবে।
যে কাগজপত্র লাগবে
বিজ্ঞপ্তিতে উল্লিখিত নির্ধারিত সময় নির্ধারিত স্থানে উপস্থিত থেকে প্রার্থীদের প্রথমে শারীরিক মাপ ও শারীরিক পরীক্ষা দিতে হবে। প্রাথমিকভাবে বাছাইকৃত প্রার্থীদের জেলার পুলিশ সুপার কর্তৃক সরবরাহকৃত আবেদন ফরম পূরণ করে ৩ কপি সত্যায়িত ছবিসহ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লিখিত প্রয়োজনীয় সব কাগজপত্র ও পরীক্ষা ফি বাবদ ১০০ টাকা ১-২২১১-০০০০-২০৩১ এই কোড নম্বরে ট্রেজারি চালানের মাধ্যমে চালানের কপি আবেদনের সঙ্গে জমা দিতে হবে।
বাছাই পদ্ধতি
বিগত বছরে নিয়োগ পাওয়া কয়েকজন কনস্টেবলের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, লিখিত পরীক্ষায় সাধারণত বাংলা, ইংরেজি, সাধারণ গণিত ও সাধারণ জ্ঞান থেকে প্রশ্ন থাকে। লিখিত পরীক্ষায় ভালো করতে হলে ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির পাঠ্যবইগুলো ভালোভাবে পড়তে হবে। লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর প্রার্থীদের ২০ নম্বরের মনস্তাত্ত্বিক ও মৌখিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হবে। উত্তীর্ণ হতে হলে উভয় পরীক্ষায় আলাদাভাবে ৪৫ শতাংশ নম্বর পেতে হবে। লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের পুলিশ ভেরিফিকেশন ও স্বাস্থ্য পরীক্ষায়ও যোগ্য হতে হবে। সকল প্রকার যাচাই বাছাই শেষে প্রাথমিকভাবে প্রশিক্ষণের জন্য প্রার্থীগণকে মনোনীত করা হবে। পরে এসব প্রার্থীর প্রশিক্ষণকেন্দ্রে যোগদানের পর পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে গঠিত পুনঃবাছাই কমিটি কর্তৃক অন্যান্য তথ্য যাচাইয়ের পর তাদের চূড়ান্তভাবে প্রশিক্ষণে অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
শারীরিক পরীক্ষা
শারীরিক মাপ ও শারীরিক পরীক্ষা নেওয়া হবে প্রার্থীর নিজ জেলার পুলিশ লাইন্স ময়দানে। সাধারণ ও অন্যান্য কোটার জন্য আগ্রহী পুরুষ প্রার্থীদের উচ্চতা কমপক্ষে ৫ ফুট ৬ ইঞ্চি বা ১.৬৭৬৪ মিটার এবং বুক স্বাভাবিক অবস্থায় ৩১ ইঞ্চি বা ০.৭৮৭৪ মিটার এবং সম্প্রসারিত অবস্থায় ৩৩ ইঞ্চি বা ০.৮৩৮২ মিটার হতে হবে। মুক্তিযোদ্ধা কোটায় আগ্রহী পুরুষ প্রার্থীদের জন্য উচ্চতা কমপক্ষে ৫ ফুট ৪ ইঞ্চি বা ১.৬২৫৬ মিটার এবং বুক স্বাভাবিক অবস্থায় ৩০ ইঞ্চি বা ০.৭৬২০ মিটার এবং সম্প্রসারিত অবস্থায় ৩১ ইঞ্চি বা ০.৭৮৭৪ মিটার হতে হবে। উপজাতীয় কোটায় আগ্রহী পুরুষ প্রার্থীদের জন্য উচ্চতা হতে হবে কমপক্ষে ৫ ফুট ৪ ইঞ্চি বা ১.৬২ মিটার এবং বুক স্বাভাবিক অবস্থায় ৩১ ইঞ্চি বা ০.৭৮৭৪ মিটার এবং সম্প্রসারিত অবস্থায় ৩৩ ইঞ্চি বা ০.৮৩৮২ মিটার। আগ্রহী নারী প্রার্থীদের জন্য (সব কোটা) উচ্চতা কমপক্ষে ৫ ফুট ২ ইঞ্চি বা ১.৫৭৮৪ মিটার হতে হবে।
নির্ধারিত তারিখে উপস্থিত হতে হবে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ। এর আগে কোনো আবেদনের প্রয়োজন নেই। চাকরিরত প্রার্থীদের সঙ্গে রাখতে হবে কর্তৃপক্ষের অনুমতিপত্র। শারীরিক মাপ পরীক্ষায় বয়স, উচ্চতা, বুকের প্রস্থ ও ওজন ঠিক আছে কি না যাচাই করা হবে। এরপর অংশ নিতে হবে দৌড়ে। সাধারণত ১৩৭.৫ মিটার দূরত্বে দৌড়ানোর জন্য বলা হয়ে থাকে। ফিটনেস যাচাইয়ের জন্য হতে পারে লং জাম্প পরীক্ষাও। খোলা মাঠে লং জাম্প ও দৌড়ের প্র্যাকটিস করতে হবে। শারীরিক মাপের সময় হাফহাতা বা টি-শার্ট পরে যাওয়াটাই ভালো। দৌড়ের উপযোগী হাফপ্যান্ট বা ঢিলেঢালা ট্রাউজার পরতে হবে, যাতে ব্যায়ামের সময় অসুবিধা না হয়। পুরুষ ও নারীরা নিজেদের উপযোগী একাধিক পোশাক সঙ্গে রাখতে পারেন, যেন ব্যায়ামের সময় বদলে নেওয়া যায়।
পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে জেলার পুলিশ সুপার পরবর্তী পরীক্ষার জন্য প্রবেশপত্র ইস্যু করবেন। একই সঙ্গে তিনি লিখিত পরীক্ষার কেন্দ্র নির্ধারণ করে প্রার্থীদের জানিয়ে দেবেন। লিখিত, মনস্তাত্ত্বিক ও মৌখিক পরীক্ষার সময় সঙ্গে আনতে হবে প্রবেশপত্র।
লিখিত পরীক্ষা
শারীরিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে নির্দিষ্ট দিনে বসতে হবে লিখিত পরীক্ষায়। পরীক্ষার পূর্ণমান ৪০। সময় দেড় ঘণ্টা। সাধারণত বাংলা ১৫, ইংরেজি ১৫ ও সাধারণ গণিত থেকে ১০ নম্বরের প্রশ্ন থাকে। অষ্টম, নবম ও দশম শ্রেণির বোর্ড নির্ধারিত পাঠ্য বই থেকেই প্রশ্ন করা হয়। লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পেতে হবে কমপক্ষে ৪৫ শতাংশ নম্বর।
বাংলা অংশে রচনা, অনুচ্ছেদ লিখন, ভাবসম্প্রসারণ, ইংরেজি থেকে বাংলায় অনুবাদ, এক কথায় প্রকাশ, বাগারা, সমার্থক শব্দ, সন্ধি বিচ্ছেদ থেকে প্রশ্ন আসতে পারে। এসএসসি পর্যায়ের বাংলা প্রথম পত্র এবং বোর্ডের ব্যাকরণ বই পড়তে হবে। বাংলাদেশ প্রসঙ্গ, পুলিশ বাহিনী ও সাম্প্রতিক বিষয়াবলি থেকে কিছু সাধারণ জ্ঞানমূলক প্রশ্নও করা হতে পারে।
ইংরেজিতে প্রশ্ন আসে Fill in the Gaps, Sentence Making, Translation, Essay, Paragraph, Letter, Application থেকে। Fill in the Gaps অংশে ভালো করার জন্য Grammar-এর বিভিন্ন Rules, Tense, Noun, Pronoun, Adjective, Verb-এর বিভিন্ন Form ভালোভাবে আয়ত্তে রাখতে হবে। সেন্টেন্স মেইকিং এর ক্ষেত্রে বাক্য যেন অর্থবোধক হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। অষ্টম ও নবম-দশম শ্রেণির উপযোগী Essay, Paragraph, Letter, Application-এর প্রস্তুতি নিলেই চলবে। পাটিগণিত ও বীজগণিত থেকে প্রশ্ন করা হয় সাধারণ গণিত অংশে। সাধারণত শতকরা, লাভ-ক্ষতি, সুদকষা, ল.সা.গু. ও গ.সা.গু. থেকে প্রশ্ন থাকে। ভালো করতে চাইলে অষ্টম থেকে দশম শ্রেণির সাধারণ গণিত বইয়ের অংক বারবার চর্চা করতে হবে।
মনস্তাত্ত্বিক ও মৌখিক পরীক্ষা
লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের নির্ধারিত তারিখে মনস্তাত্ত্বিক ও মৌখিক পরীক্ষার জন্য ডাকা হবে। এতে থাকবে ২০ নম্বর। ব্যক্তিগত পরিচিতিমূলক প্রশ্নের পাশাপাশি প্রার্থীর মানসিক দক্ষতা, মূল্যবোধ বিচারের জন্য বিভিন্ন ধরনের প্রশ্ন করা হয় এ পরীক্ষায়। মনস্তাত্ত্বিক ও মৌখিক পরীক্ষায় উপস্থাপনা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। পোশাক মার্জিত ও মানানসই হতে হবে। ভাইভা বোর্ডে নিজেকে উপস্থাপন করতে হবে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে। যে বিষয়ে জানতে চাওয়া হবে তার যথাযথ উত্তর দিতে হবে। অপ্রাসঙ্গিক কোনো কথা বলা যাবে না। কমপক্ষে ৪৫ শতাংশ নম্বর পেতে হয় মৌখিক পরীক্ষায়।
প্রশিক্ষণ
মনোনীত প্রার্থীদের প্রথমে নির্ধারিত প্রশিক্ষণকেন্দ্রে ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি) হিসেবে ৬ মাস মেয়াদি মৌলিক প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করতে হবে। এই প্রশিক্ষণকালীন প্রার্থীরা বিনামূল্যে পোশাকসামগ্রী, থাকা-খাওয়া, চিকিত্সা সুবিধাসহ প্রতি মাসে ৭৫০ টাকা হারে প্রশিক্ষণ ভাতা পাবেন। এই পেশার দায়দায়িত্বের একজন পুলিশ কনস্টেবলকে মাঠপর্যায়ে অত্যন্ত সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করতে হয়। অন্যান্য পেশার চেয়ে এই পেশার দায়দায়িত্ব ও ঝুঁকি একটু বেশি।
বেতন-ভাতা
চূড়ান্তভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত একজন কনস্টেবল জাতীয় বেতন ২০১৫ সালের ১৭ তম গ্রেড অনুযায়ী ৯ হাজার টাকা থেকে ২১ হাজার ৮’শ টাকা বেতন পাবেন। এ ছাড়া আরও কোনো সুবিধা বা বেতন সংক্রান্ত কোনো সংযোজন থাকলে তা পরবর্তীতে যুক্ত করা হবে। উল্লেখ্য, নিয়োগের বিজ্ঞপ্তিটি পাওয়া যাবে http://www. police.gov.bd/ এই ঠিকানায়।
ফজর | ৫:০৬ |
যোহর | ১২:১২ |
আসর | ৪:২৩ |
মাগরিব | ৬:০৪ |
এশা | ৭:১৬ |
পড়ুন |