ইত্তেফাক রিপোর্ট
‘ট্যানারি দূষণ থেকে বুড়িগঙ্গা ও ধলেশ্বরী নদী রক্ষায় করণীয়’ শীর্ষক এক সেমিনারে বক্তারা বলেছেন, মালিকদের সদিচ্ছার অভাবের কারণেই হাজারীবাগ ট্যানারি স্থানান্তর প্রক্রিয়া ঝুলে আছে। এই প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানান তারা। গতকাল বুধবার, জাতীয় প্রেসক্লাবে বাপা আয়োজিত সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে নৌ-পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান বলেন, ভালো কাজের জন্য রাজনৈতিক সদিচ্ছা দরকার, আর তা বর্তমান সরকারের রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর দৃঢ় প্রত্যয় ও আন্তরিকতায় নদী দখলমুক্ত ও দূষণমুক্ত করতে আমরা অনেক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। তিনি বলেন, মালিকদের সদিচ্ছার অভাবের কারণেই সাভারে চামড়া শিল্প নগরী স্থানান্তর প্রক্রিয়া সম্পন্ন হচ্ছে না। এতে করে আদালতের নির্দেশনাও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। পরিবেশ ও মানবিকতার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে মালিকদের মানসিকতার পরিবর্তনের ওপর তিনি গুরুত্বারোপ করেন। পাশাপাশি পরিবেশ রক্ষা ও নদ-নদীর দূষণ রোধ করতে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানান।
তিনি ট্যানারি শিল্পের সমস্যা ও করণীয় বিষয়ে একটি সুপারিশমালা তৈরি ও তা সরকারকে প্রদানের জন্য পরিবেশবাদীদের উদ্যোগে একটি ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন ও এই গ্রুপের মাধ্যমে তদারকিরও প্রস্তাব করেন।
সভাপতির বক্তব্যে সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, চামড়া শিল্প আমাদের সম্পদ, দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে এ শিল্পের ভূমিকা রয়েছে। কিন্তু নদী আমাদের বড় সম্পদ, নদী আমাদের জীবনের সাথে জড়িত। সুতরাং যাতে ট্যানারি শিল্প টিকে থাকে এবং নদীও রক্ষা পায়, এজন্য সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষকে নিয়ে একটি সমন্বিত কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। তিনি আরো বলেন, এ শিল্পের উন্নয়নের স্বার্থেই এখানে কর্মরত শ্রমিকদের নিরাপত্তা, আবাসন ব্যবস্থা, স্বাস্থ্য ও তাদের সন্তানদের শিক্ষার ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
সুপ্রিম কোর্টের অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ বলেন, মালিক-সরকার পক্ষের চুক্তির ভিত্তিতে সাভারে ট্যানারি শিল্প স্থানান্তর প্রক্রিয়ার ঘোষণার পরও টেন্ডার ত্রুটির কারণে স্থনান্তর দীর্ঘায়িত হয়েছে। সার্বিক বিবেচনায় মনে হচ্ছে- মালিকপক্ষ মানসিকভাবে সাভারে যেতে প্রস্তুত ছিল না। তবে মামলার দীর্ঘ জটিলতা কাটিয়ে আদালতের কঠোর নির্দেশনার পর হাজারীবাগের ট্যানারি শিল্প সাভার যেতে শুরু করছে। এটি যাতে যথাযথভাবে হয় তা নিশ্চিত করতে হবে সরকারকেই। তিনি বলেন, নদী রক্ষায় জেলা প্রশাসনের গাফিলতির কারণে অনেক ক্ষেত্রেই সরকারের নির্দেশনা বাস্তবায়িত হচ্ছে না, তাই সরকারকে এ বিষয়টি নজরদারি করতে হবে।
বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান মো. শাহীন আহমেদ বলেন, সাভারের ট্যানারি শিল্পনগরীর প্রয়োজনীয় অনেক সুযোগ সুবিধাই সেখানে অপ্রতুল, কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নেই। সরকার ঘোষিত অনেকগুলো কার্যক্রম বাস্তবে এখনো সম্পূর্ণ হয়নি।
সেমিনারে আরো বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ ট্যানারি ওয়ার্কাস ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. আব্দুল মালেক, জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের সাবেক সদস্য মো. আলাউদ্দিন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ২৩ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আলহাজ মো. হুমায়ুন কবির প্রমুখ।