রেললাইনে কাটা পড়িয়া বা ট্রেনের ধাক্কায় হতাহতের সংখ্যা দিন দিন উদ্বেগজনকভাবে বাড়িতেছে। গত শুক্রবারও কমলাপুর, মহাখালী এবং গাজীপুরের শ্রীপুরে রেললাইনে কাটা পড়িয়া তিন ব্যক্তির মৃত্যু হইয়াছে। গত সাত মাসে সারা দেশে এই ধরনের মৃত্যুর সংখ্যা ছয় শতাধিক। রেললাইনে বসিয়া আড্ডা দেওয়া, কানে হেডফোন লাগাইয়া বা মোবাইল ফোনে কথা বলিতে বলিতে হাঁটা এবং ট্রেন আসিতে দেখিয়াও রেললাইন পার হইবার প্রবণতা বৃদ্ধি পাইবার কারণেই মূলত এই ধরনের প্রাণহানির ঘটনা দিন দিন বাড়িতেছে বলিয়া মনে করেন রেলওয়ে পুলিশ। কিন্তু পরিতাপের বিষয় হইল, গড়ে প্রতিদিন দুইয়ের অধিক দুর্ঘটনা ঘটিলেও— এই ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে এখন পর্যন্ত কোনো কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করিতে দেখা যায় নাই।
রেললাইনে সাধারণত নানা কারণে দুর্ঘটনা ঘটিয়া থাকে। ইহার মধ্যে লেভেল ক্রসিং দুর্ঘটনাই অধিক সংখ্যক প্রাণহানির জন্য দায়ী। জানা যায়, দেশে রেলওয়ের নেটওয়ার্কে দুই হাজার ৫৪১টি লেভেল ক্রসিং থাকিলেও গেটম্যান রহিয়াছে মাত্র ২৪২টিতে। তাহার উপর দেশব্যাপী যত্রতত্র ব্যাঙের ছাতার মতো বহু লেভেল ক্রসিং তৈরি হইয়াছে ব্যক্তি বা প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগে। এইগুলির বেশিরভাগই অরক্ষিত। এমন পরিস্থিতিতে গত তিন বত্সরে দেশ জুড়িয়া হাজারটিরও বেশি লেভেল ক্রসিং দুর্ঘটনা ঘটিয়াছে বলিয়া জানা যায়। অন্যদিকে কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা ও অসাধুতাকে পুঁজি করিয়া রেললাইন ঘেঁষিয়া শত শত বস্তিঘর এবং ভ্রাম্যমাণ বাজার বসিবারও ভূরি ভূরি নজির রহিয়াছে। মূলত এই ধরনের অবৈধ স্থাপনা বৃদ্ধির কারণেই রেললাইনে মৃত্যুর মিছিল দীর্ঘ হইতেছে বলিয়া বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।
রেল চলাচলের জন্য কেবল সমান্তরাল লাইন নহে, নিরাপত্তার জন্য লাইনের উভয় পার্শ্বে যথেষ্ট পরিসর থাকা প্রয়োজন। কিন্তু ঢাকাসহ মহানগরগুলিতে রেলযাত্রা দেখিলে মনে হয় দোকানপাটের সুড়ঙ্গের ভিতর দিয়া কায়ক্লেশে এক অসহায় যান অতীব ধীরগতিতে চলিতেছে। এইসকল বিষয়াদি দেখভাল করিবার জন্য রেল কর্তৃপক্ষ রহিয়াছে, আছে আরও নানা কর্তৃপক্ষ। তাহা সত্ত্বেও বত্সরের পর বত্সর ধরিয়া একই রকম পরিস্থিতি বিরাজ করে কীভাবে তাহা আমাদের বোধগম্য নহে। রেল লাইনে প্রাণহানি কিংবা রেলওয়ের সার্বিক নিরাপত্তার স্বার্থেই রেলওয়ের জমি অবৈধভাবে দখলকারীদের চিহ্নিত করিয়া দ্রুত আইনের আওতায় আনা প্রয়োজন। সর্বোপরি, রেল লাইন ধরিয়া হাঁটা কিংবা পারাপারের ক্ষেত্রেও জনসাধারণের সচেতনতার কোনো বিকল্প নাই। রেল কর্তৃপক্ষের উচিত এই ব্যাপারেও যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করা।