ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নির্বাচনকে ‘তামাশার নির্বাচন’ আখ্যায়িত করে তা বাতিল, নতুন করে নির্বাচন অনুষ্ঠান এবং পুরো নির্বাচন কমিশনের (ইসি) পদত্যাগ দাবি করেছে ‘আদর্শ ঢাকা আন্দোলন’। বিএনপি সমর্থক পেশাজীবীদের এই ফোরামটি গতকাল বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি জানায়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনের সদস্যসচিব শওকত মাহমুদ। তিনি বলেন, “আমরা নির্বাচন কমিশনের কাছে প্রত্যাশা করেছিলাম তারা সবকিছুর ঊর্ধ্বে গণতন্ত্র, আইনের শাসন তুলে ধরে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দেবে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে তাদের ব্যর্থতা হিমালয়চুম্বী, ক্ষমার অযোগ্য।”
সংগঠনের আহ্বায়ক অধ্যাপক এমাজউদ্দিন আহমাদ বলেন, তিনি ১৯৪৬ সাল থেকে সব নির্বাচন দেখেছেন। কোনো নির্বাচনই মঙ্গলবারের ?নির্বাচনের সঙ্গে তুল্য নয়। এ নির্বাচন আবর্জনাতুল্য। যেভাবে নির্বাচন হয়েছে, এভাবে নির্বাচন হয় না। তিনি বলেন, হরতাল হচ্ছিল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল— এমন পরিস্থিতিতে তাদের সংগঠন নির্বাচনে যাওয়ার জন্য বিএনপিকে প্রস্তাব করেছিলেন। নির্বাচন হলে এক ধরনের সংলাপ হবে, এটা ভেবেই প্রস্তাব করেন তারা। দেশের সংঘাতপূর্ণ রাজনীতিকে একটি সুস্থ আবহে ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ গণতন্ত্রে ফিরিয়ে এনে ঢাকাকে আদর্শ বাসযোগ্য হিসেবে গড়ে তুলতে তারা এ সংগঠন গড়ে তুলেছিলেন। সে কারণে তারা নির্দিষ্ট কিছু লক্ষ্য ও ভিশন নিয়ে মেয়র-কাউন্সিলর প্রার্থী মনোনয়ন দিয়েছিলেন। ২০ দল তাতে সমর্থন জানিয়েছিল।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এই উপাচার্য যোগ করেন, এক অর্থে সংলাপ হয়েছে। ভোটারেরা ভোটারদের সঙ্গে কথা বলেছেন, প্রার্থীরা প্রার্থীদের সঙ্গে কথা বলেছেন, বিভিন্ন পর্যায় থেকে আদর্শ ঢাকা আন্দোলনের সঙ্গে কথা হয়েছে। তিনি বলেন, তারা ভেবেছিলেন, এটিকে বৃহত্তর পর্যায়ে নিয়ে গেলে রাজনৈতিক সংলাপের রূপ আসবে। কিন্তু তা হয়নি। তিনি জাতীয় স্বার্থে ইসির পদত্যাগ দাবি করে বলেন, নির্বাচন কমিশন যা করেছে, প্রাইমারি স্কুলের ছাত্রদের বসিয়ে দিলেও এমন হবে। কাজেই এই কমিশনের অধীনে সামনে কোনো নির্বাচন হওয়া সম্ভব না। উচিতও না। নির্বাচনের মাধ্যমে দেশের মানুষের কাঙ্ক্ষিত গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে এ নির্বাচন কমিশনকে রাখলে চলবে না।
এক প্রশ্নের জবাবে শওকত মাহমুদ বলেন, আদর্শ ঢাকা আন্দোলন একটি নাগরিক সংগঠন। এটি কোনো রাজনৈতিক দল নয়। তাই এই নির্বাচন বিষয়ে কোনো কর্মসূচি দেয়ার চিন্তা তাদের নেই। বিএনপি নেতা ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের সঙ্গে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে বিএনপি-সমর্থিত মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়াল ও বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহাকরী শিমুল বিশ্বাসের কথোপকথনে বিএনপির নির্বাচন বর্জন পূর্বপরিকল্পিত বলে মনে হয়েছে-এমন অভিযোগের বিষয়ে শওকত মাহমুদ বলেন “এটা ঠিক নয়। এটা ভিত্তিহীন। খালেদা জিয়া সিরিয়াসলি নির্বাচন নিয়ে কাজ করেছেন। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করেছেন। পরিকল্পিত হলে তা করতেন না।” ভোটের দিন সকাল থেকে বিভিন্ন কেন্দ্রের পরিস্থিতি দেখে তারা নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত নেন বলেও তিনি উল্লেখ করেন। সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ ও সাবেক প্রো-ভিসি প্রফেসর আ ফ ম ইউসুফ হায়দার, সিনিয়র সাংবাদিক মাহফুজ উল্লাহ, ডিইউজে সভাপতি কবি আবদুল হাই শিকদার প্রমুখ।