আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর অবস্থানের কারণে বেশ কিছুদিন নিষ্ক্রিয় থাকলেও চট্টগ্রামে ফের সক্রিয় হচ্ছে জঙ্গিরা। মূলত জাতীয় নির্বাচনের আগে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির লক্ষ্য নিয়ে তারা পুনরায় মাঠে নামছে বলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা মনে করছেন। জঙ্গিরা তাদের আস্তানায় বোমা, গোলাবারুদসহ বিভিন্ন ধরনের মারাত্মক অস্ত্রশস্ত্রের মজুদ গড়ে নাশকতার প্রস্তুতি নিচ্ছে। সদস্য সংগ্রহ ও প্রশিক্ষণের সুবিধার্থে তারা শহরের তুলনায় প্রাধান্য দিচ্ছে মহাসড়কের পাশে গ্রামীণ জনপদ ও পাহাড়ি এলাকাকে। গ্রামের বেকার যুবক ও মাদ্রাসা ছাত্রদের সংগঠিত করে গোপনে দেয়া হচ্ছে জঙ্গি প্রশিক্ষণ।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে জেলার হাটহাজারী, বাঁশখালী, সীতাকুণ্ড ও মিরসরাই উপজেলাসহ নগরী ও জেলার বিভিন্ন স্থানে বেশ কয়েকটি জঙ্গি আস্তানার সন্ধান পায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। প্রতিটি আস্তানাই ছিল পাহাড়ি এলাকা কিংবা নির্জন জনমানবশূন্য এলাকায়। সর্বশেষ গতকাল শুক্রবার চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার জোরারগঞ্জে একটি জঙ্গি আস্তানা থেকে দুই পুরুষ জঙ্গির ছিন্নভিন্ন লাশ পায় র্যাব। বিপুল অস্ত্রশস্ত্রও উদ্ধার করা হয়।
এদিকে, কিছুদিন আগে নগরীতে হিযবুত তাহরীরের এক সদস্যকে আটকের পর চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ কমিশনার মো. মাহাবুবর রহমান ইত্তেফাককে বলেছিলেন, নির্বাচনের আগে কিছু গোষ্ঠী রাজনৈতিক সুবিধা নেয়ার জন্য তত্পর হয়ে উঠে। এজন্য তারা নানাভাবে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চায়।
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কয়েকজন কর্মকর্তা বলেন, জঙ্গি সংগঠনগুলোর মূল টার্গেট বিভিন্ন মাদ্রাসার নিরীহ শিক্ষার্থী ও বেকার যুবক। শুরুতে ধর্মীয় আলোচনা এবং পরে বই-পুস্তক পড়তে দেওয়া হয়। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে নিহত মুসলিম শিশুর ভিডিও দেখানো হয়। ইরাক, ফিলিস্তিন, আরাকানসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মুসলমানদের ওপর নির্যাতনের দৃশ্য, ওসামা বিন লাদেন, আইমান আল জাওয়াহিরি ও অন্যান্য জঙ্গি নেতার বক্তব্য ও সাক্ষাত্কার, বিভিন্ন জিহাদবিষয়ক ভিডিও, আফগান যুদ্ধ, বিভিন্ন স্থাপনায় বোমা হামলার দৃশ্য দেখিয়ে তাদের ‘জিহাদে’ উজ্জীবিত করা হয়ে থাকে। এরপর তাদের প্রশিক্ষণে নেওয়া হয়। কীভাবে বিমান হাইজ্যাক কিংবা কাউকে অপহরণ করতে হবে এর ভিডিওচিত্র দেখানো হয়। প্রশিক্ষণ শেষে তাদের দুর্গম পাহাড়ে পাঠিয়ে দেওয়া হয় হাতে কলমে প্রশিক্ষণের জন্য। আর এজন্য সবচেয়ে সুবিধাজনক মনে করা হয় চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের পাহাড়গুলোকে।
২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার লটমনি পাহাড়ে শহিদ হামজা ব্রিগেড নামে জঙ্গি আস্তানার সন্ধান পায় র্যাব। গরু ও মুরগির খামারের আড়ালে সেখানে অস্ত্র প্রশিক্ষণ চলতো। এরপর ২০১৭ সালের মার্চে সীতাকুণ্ড উপজেলার কলেজ রোডে ছায়ানীড় নামের একটি বাড়িতে জঙ্গি আস্তানার সন্ধান পাওয়া যায়। ওই অভিযানে চার সন্দেহভাজন জঙ্গি নিহত হওয়া ছাড়াও বিপুল পরিমাণ বোমা তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়। এর বাইরেও বিভিন্ন সময়ে জঙ্গি আস্তানার সন্ধান ও অস্ত্র গোলাবারুদ উদ্ধার হয়েছে।
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মিরসরাই ও সীতাকুণ্ড উপজেলার ওপর দিয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক চলে গেছে। যাতায়াত ব্যবস্থা অত্যন্ত সুবিধাজনক। রয়েছে রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা। এ ছাড়াও রয়েছে পাহাড়বেষ্টিত অঞ্চল। প্রয়োজনে সাগরপথে পালিয়ে যাওয়ার সুবিধাও রয়েছে। মিরসরাইয়ের পাশেই ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য। আত্মগোপনের সকল সুবিধা থাকায় বারবার জঙ্গিরা আস্তানা গড়ার ক্ষেত্র হিসেবে এই দুই উপজেলাকে বেছে নেয়। পুলিশ বলছে, সীতাকুণ্ড এলাকায় অনেক শিল্পকারখানা রয়েছে। এ ছাড়া মিরসরাই এলাকায় গড়ে উঠছে দেশের বৃহত্তম অর্থনৈতিক জোন। এ কারণে তহবিল সংগ্রহ করার টার্গেট নিয়ে জঙ্গিরা এ দুই উপজেলায় বারবার ঘাঁটি গড়ার চেষ্টা করে।