রাজশাহীর তানোরে কথিত অশুভ শক্তি (জিন) তাড়ানোর নামে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর এক নারীকে পা দিয়ে মাড়িয়ে ও পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ পাওয়া গেছে। মঙ্গলবার রাতে উপজেলার মুন্ডুমালা পৌরসভার ‘সাধুজন মেরী ভিয়ান্নী’ গির্জায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত ফুলমনি (৬০) মুন্ডুমালা পৌর এলাকার চুনিয়াপাড়ার মৃত ঝাদেম মার্ডির স্ত্রী। ফুলমনিকে হত্যার অভিযোগে ওই গির্জার শিক্ষিকা বিলাসীসহ সাতজনকে পুলিশ আটক করেছে। এরা হচ্ছে রতন মার্ডি (২৫), হিউবার্ড ববি মার্ডি (২০), ফাল্গুনী মুরমু (১৪), বর্ষা মার্ডি (১৩), সম্পা মার্ডি (১৪), পিয়াস হেমরম (২৫)। রাজশাহী সদর সার্কেলের (এএসপি) আব্দুর রশিদ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, তদন্তে দোষী প্রমাণিত হলে গির্জার ফাদার মাইকেল কোড়াইয়াকেও গ্রেফতার করা হবে।
নিহতের মেয়ে আরতি অভিযোগে বলেন, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তার মা ফুলমনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। অশুভ শক্তির প্রভাব আছে চিন্তা করে তাকে ঝারফুঁক দেয়ার জন্য স্থানীয় গির্জায় নিয়ে যাওয়া হয়। গির্জার ফাদার মাইকেল কোড়াইয়াও জানায় যে, ফুলমনির শরীরে অশুভ শক্তি ভর করেছে। তিনি গির্জার শিক্ষিকা বিলাসীকে ঝারফুঁকের মাধ্যমে ফুলমনির শরীর থেকে অশুভ শক্তি দূর করার নির্দেশ দেন। এরপর শিক্ষিকা বিলাসীর নেতৃত্বে আটকরা ঝাড়ফুঁকের নামে ফুলমনির ওপর শারীরিক নির্যাতন শুরু করে। তারা সাতজন মিলে ফুলমনিকে মাটিতে ফেলে পা দিয়ে মাড়িয়ে এবং পিটিয়ে গুরুতর জখম করে। ফুলমনির শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে মেয়ে আরতি তাকে হাসপাতালে ভর্তির জন্য গির্জার ফাদারের কাছে অনুরোধ করেন। কিন্তু আরতিকে পাত্তা না দিয়ে কথিত চিকিত্সার নামে ফুলমনির ওপর শারীরিক নির্যাতন চলতে থাকে। এক পর্যায়ে রাত ১টার দিকে ফুলমনির মৃত্যু হয়।
তানোর থানার ওসি আনোয়ার হোসেন জানান, নিহতের মেয়ে আরতির মাধ্যমে খবর পেয়ে মুন্ডুমালা তদন্ত কেন্দ্রের পুলিশ কথিত চিকিত্সার নামে নির্যাতনে জড়িত সাত জনকে আটক ও ভিকটিমের লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে। সুরতহাল রিপোর্টে নিহতের শরীরে অসংখ্য আঘাতের চিহ্নের ভিত্তিতে থানায় মামলার প্রস্তুতি চলছে। তবে গির্জার ফাদার মাইকেল কোড়াইয়া নিহত ফুলমনিকে নির্যাতনের অভিযোগ অস্বীকার করে সাংবাদিকদের বলেন, এখানে শুধু অসুস্থ ব্যক্তিদের ঝাড়ফুঁক দেয়া হয়।