ফুটবল এবং ক্রিকেটের পর একটা সময় হকি ছিল দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা। নিজস্ব মাঠ ও ছোট পরিসরে গ্যালারি থাকলেও দেশের আনাচে কানাচে হকি খেলাটা পৌঁছাতে পারছিল না। ১৯৮২ সালে যখন ঢাকায় এশিয়া কাপ হকির প্রথম আসর বসে সেবারই ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায় হকি। তুমুল উত্তেজনাপূর্ণ সেই হকির আসর এমনই একটি জায়গা করে নেয় যে, গ্রামে গ্রামে গাছের ডাল ভেঙে হকি খেলেছিল তরুণ প্রজন্ম। শহুরে ক্রীড়াপ্রেমিরা কাঠ হাতে মাঠে মাঠে হকি খেলেছিল।
বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম সংলগ্ন এখন যে আউটার স্টেডিয়াম, খোলা মাঠ, এখানেই ছিল দেয়াল ঘেরা হকি স্টেডিয়াম। ৮০’র দশকে দুই টাকা টিকিটে খেলা দেখতেন দর্শক। ঘাসের মাঠে খেলা হতো। পাশেই ফুটবলের আউটার স্টেডিয়ামে হকির জায়গা হয় নব্বই দশকে। তারপর ঘাসের মাঠ থেকে রূপান্তর হয় অ্যাস্ট্রটার্ফে। দুই বার টার্ফ স্থাপন করা হয়েছে। সময়ের পালাক্রমে আজ মওলানা ভাসানী জাতীয় হকি স্টেডিয়ামটি এখন দেশের অন্যতম আধুনিক সুবিধা সম্পন্ন স্টেডিয়ামে পরিণত। ৮ দেশ নিয়ে এ মাঠেই আজ শুরু হতে যাচ্ছে এশিয়া কাপ হকির সবচেয়ে মর্যাদা সম্পন্ন লড়াইয়ের দশম আসর। ১২ দিনের হকি যুদ্ধ।
হকি স্টেডিয়ামে সাজ সাজ রব নেই। সংস্কার করে যেন পুরোন বাড়িটি নতুন রূপে গড়ে তোলা হয়েছে। আন্তর্জাতিক হকি খেলা আয়োজন করতে যা কিছু প্রয়োজন, তা করা হয়েছে ১৯ কোটি টাকা ব্যয়ে।
স্টেডিয়ামের ভেতরে জ্বলছে ফ্লাড লাইট। বর্হিবিশ্বে অনেক আগেই হকি মাঠে ফ্লাড লাইট জ্বললেও ঢাকায় এই প্রথম। সন্ধ্যায় যারা এই এলাকা দিয়ে যাবেন তাদের চোখ জুড়িয়ে যাবে আলোর বন্যায়। দৃষ্টি নন্দন আলোকিত স্টেডিয়ামের পরিবেশ হাতছানি দেবে যে কাউকে। দর্শক চাইলেই ভেতরে ঢুকতে পারবে স্ত্রী, সন্তান, পরিবার, বন্ধুসহ। গ্যালারিতে টিকিট লাগবে না। দ্বিতীয় খেলার বিরতিতে জ্বলবে ফ্লাড লাইট। রঙ্গীন হয়ে উঠবে পুরো পরিবেশ, চাঙ্গা হবেন যে কেউ। আবার আসতে চাইবে মন। ফ্লাড লাইট এবং স্টেডিয়ামের ড্রেনেজ সিস্টেম স্থাপনে ১০ কোটি টাকা ব্যয়, জানিয়েছেন হকির কর্মকর্তা। দিনের প্রথম খেলা বিকাল ৩টায় দ্বিতীয় খেলা সাড়ে ৫টায়। তবে গতকাল রাত পর্যন্ত ফ্লাড লাইটের আলোর প্রক্ষেপণ নিয়ে একটু জটিলতা চলছিল। কারণ কর্নার ফ্ল্যাগের সামনে আলোর সংকট আছে। হকি ফেডারেশন কর্মকর্তা রশিদ সিকদার জানিয়েছেন আলোর প্রক্ষেপণ চূড়ান্ত হলে অনুমোদন পেতে হবে। এজন্য একজন বৃটিশ নাগরিকও এসেছেন। ফ্লাডলাইটের ক্লিয়ারেন্স পেতে ২ হাজার ডলার দিতে হবে।’ এমন সময় টুর্নামেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান শফিউল্লাহ আল মুনির এসে পরামর্শ করে বলছিলেন, ‘বিদ্যুত্ চলে গেলে ফ্লাড লাইট জ্বলবে কিভাবে? রশিদ সিকদারকে বললেন, ‘বিকল্প ব্যবস্থা করেছি।’
গ্যালারির দর্শক জায়ান্ট স্ক্রিনে খেলাও দেখতে পারবেন। খেলার কোনো বিতর্কিত সিদ্ধান্ত দেখা যাবে বড় পর্দায়। ঘড়ি দেখা যাবে। খেলার কতো সময় গেল, কতোটা বাকি আছে দর্শক নিজেই দেখবে। স্কোর বোর্ড পরিচালনার জন্য বিদেশি বিশেষজ্ঞ এসেছেন। ৬ হাজার ডলার তার পারিশ্রমিক হলেও বাংলাদেশ হকি ফেডারেশন তাকে ৩ হাজারে পাচ্ছে। আন্তর্জাতিক হকি ফেডারেশনের কর্মকর্তার বরাত দিয়ে ফেডারেশন কর্মকর্তা খাজা রহমতউল্লাহ জানিয়েছেন ব্রাজিলের রিও অলিম্পিক গেমসের স্কোর বোর্ডের চেয়েও বাংলাদেশেরটি ভালো হয়েছে।
আধুনিক ড্রেসিং রুম করা হয়েছে। যেখানে এবার আইস বাথ থাকছে খেলোয়াড়দের জন্য। খাজা রহমতউল্লাহ বেশ খুশি একটা আধুনিক স্টেডিয়াম হয়েছে। ভিআইপি বক্স, লিফট, প্রেসবক্সের পরিসর বেড়েছে। স্টেডিয়ামের চেহারা বদলে গেছে। কাল বিকালে দেখা গেল অনুশীলন করছে জাপান, স্টার স্পোর্টসের ব্যস্ত টিভি ক্রুরা ক্যামেরা সেট করে ট্রায়াল দিচ্ছেন। হকির কর্মকর্তাদের দম ফেলার ফুরসত নেই। কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করছেন।
এশিয়া কাপ হকির গ্রুপ পর্বের ফিকশ্চার
n গ্রুপ ‘এ’
ভারত, পাকিস্তান, জাপান, বাংলাদেশ।
n গ্রুপ ‘বি’
মালয়েশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, চীন, ওমান।
১১ অক্টোবর ঃ ভারত ও জাপান
বাংলাদেশ ও পাকিস্তান
১২ অক্টোবর ঃ মালয়েশিয়া ও চীন
ওমান ও দক্ষিণ কোরিয়া
১৩ অক্টোবর ঃ জাপান ও পাকিস্তান
বাংলাদেশ ও ভারত
১৪ অক্টোবর ঃ চীন ও ওমান
মালয়েশিয়া ও দক্ষিন কোরিয়া
১৫ অক্টোবর ঃ বাংলাদেশ ও জাপান
পাকিস্তান ও ভারত
১৬ অক্টোবর ঃ মালয়েশিয়া ও ওমান
দক্ষিণ কোরিয়া ও চীন
*২২ অক্টোবর ফাইনাল সহ ২৪টি খেলা
ষ্টার স্পোর্টস সরাসরি সম্প্রচার করবে