বিপ্লব বিশ্বাস
মিয়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গা মুসলমানদের নির্বিচারে হত্যা, নারী ধর্ষণ ও গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে সে দেশের সরকার ও সেনাবাহিনী যে হিংসার আগুন জ্বালিয়েছে তা সহজে নিভে যাওয়ার নয়। এই হিংসার আগুন শুধু মিয়ানমারকেই ধ্বংস করবে না, পুরো অঞ্চলকেই অশান্ত করে তুলতে পারে। জঘন্য মানবতাবিরোধী অপরাধ করে মিয়ানমার ইতিমধ্যেই একটি বিপজ্জনক ও ঝুঁকিপূর্ণ রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। প্রাণ বাঁচাতে প্রায় দশ লাখ রোহিঙ্গা নর, নারী ও শিশু তাদের প্রিয় মাতৃভূমি ছেড়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছে। গত এক মাসেরও বেশি সময় ধরে মিয়ানমার সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের ওপর অত্যাচার শুরু করে এ পর্যন্ত ঠিক কত মানুষকে হত্যা করেছে তার যথাযথ পরিসংখ্যান হয়তো কখনো পাওয়া যাবে না। তবে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের বক্তব্য ও বিদেশি গণমাধ্যমে প্রচারিত সচিত্র বর্ণনা থেকে অনুমান করা যায় যে, লক্ষাধিক মানুষকে তারা হত্যা করেছে। বাংলাদেশে আশ্রয় গ্রহণকারী রোহিঙ্গাদের বক্তব্য সংগ্রহ করে তা থেকে নিহত ও ধর্ষিত নারীদের পরিচয়সহ একটি আনুমানিক হিসেব পাওয়া যেতে পারে।
এরই মধ্যে জাতিসংঘসহ সারা বিশ্ব মিয়ানমারের সরকার ও সেনাবাহিনীর বর্বরতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদমুখর হয়ে উঠেছে, অবিলম্বে গণহত্যা বন্ধে প্রযোজনীয় পদক্ষেপ নিতেও বলা হচ্ছে। কিন্তু মিয়ানমার সেনাবাহিনী বিশ্ববাসীকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে তাদের নিধন যজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে। দীর্ঘদিন সামরিক শাসনের অধীনে থাকায় মিয়ানমারের জনগণ ও সেনাবাহিনীর মধ্যে গণতান্ত্রিক বা মানবিক মূল্যবোধ বলতে কিছুই নেই। বিশ্ববাসীর চোখের সামনে দিনের পর দিন যেভাবে মিয়ানমার সেনাবাহিনী হাজার হাজার মানুষকে নৃশংসভাবে হত্যা করছে, যেভাবে শত শত নারীকে ধর্ষণ করছে, বাড়িঘর জ্বালিয়ে পুড়িয়ে লাখ লাখ মানুষকে দেশ থেকে তাড়িয়ে দিচ্ছে তা আধুনিক সভ্যজগতে কল্পনাই করা যায় না। চীন, রাশিয়া, ভারত মিয়ানমারকে সমর্থন করলেও রোহিঙ্গাদের ওপর সে দেশের সেনাবাহিনীর অমানবিক নির্যাতনকে সমর্থন করছে না বলেই চীন ও ভারত শরণার্থীদের জন্য ত্রাণ পাঠিয়েছে এবং জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে আলোচনা করতে কোনো আপত্তি করেনি। আধুনিক বিশ্বে মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত মিয়ানমার সেনাবাহিনীর দায়ী সদস্যদের বিচারের ব্যবস্থা করতে না পারলে বিশ্ব শান্তি ও মানব সভ্যতা হুমকির মুখে পড়তে পারে। আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্টি করে মিয়ানমার সেনাবাহিনীকে গণহত্যা বন্ধে বাধ্য করতে হবে এবং রোহিঙ্গাদের নিরাপদে ফিরে যাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
ফরিদপুর