চারদিকে চুরির ঘটনা ঘটে হর-হামেশাই। কিন্তু মাঝেমধ্যে চুরির কিছু ঘটনা রীতিমতো চাঞ্চল্য ছড়িয়ে দেয়। পুরস্কার চুরির ঘটনা এরমধ্যে অন্যতম। পুরস্কার চুরি নিয়ে হইচই পড়ে যাওয়া কয়েকটি ঘটনা নিয়ে আমাদের আজকের আয়োজন—
‘গণিতের নোবেল’ চুরি!
চলতি বছরের ১ আগস্ট ব্রাজিলের রিও ডি জেনেরোতে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক গণিতজ্ঞ সম্মেলনে প্রদান করা হয় গণিতের নোবেলখ্যাত পুরস্কার ‘ফিল্ডস মেডেল’। এ বছর অস্ট্রেলিয়ান নাগরিক অক্ষয় ভেঙ্কাটেশ, কুর্দি বংশোদ্ভুত কউচার বিরকার, জার্মানির পিটার শুলজ ও ইতালির আলেসিও ফিগালির হাতে ওঠে এই পুরস্কার। তবে দুঃখজনক হলো পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানের কিছুক্ষণ মধ্যেই কুর্দি গণিতবিদ কউচার বিরকারের ফিল্ডস মেডেলটি চুরি যায়। যা এখনো খুঁজে পাওয়া যায়নি। সোনার তৈরি এই পদকের মূল্য ৪ হাজার ডলার।
পুরস্কার গ্রহণের আধঘণ্টার মধ্যেই ক্যামব্রিজের এই অধ্যাপক লক্ষ করেন তার পদকটি খুঁজে পাচ্ছেন না। গার্ডিয়ান জানায়, পদক গ্রহণের পর নিজের ব্রিফকেসে সেলফোন, মানিব্যাগ ও মেডেল রেখেছিলেন ব্রিকার। একটু পরই তিনি লক্ষ করেন ব্রিফকেসটি সেখানে নেই। পরে খোঁজাখুঁজির পর নিরাপত্তাকর্মীরা ব্রিফকেসটি বেঞ্চের নিচে খুঁজে পায়। কিন্তু ততোক্ষণে হাওয়া হয়ে গেছে ‘গণিতের নোবেল পদক’!
ব্রাজিলভিত্তিক এক সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, সিসি টিভি ফুটেজের মাধ্যমে এরইমধ্যে চোরকে শনাক্ত করা হয়েছে। পুরস্কার কমিটি এই ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করে।
প্রতি ৪ বছর পরপর ৪০ বছরের কম বয়সী ৪ জন গণিতবিদকে এই সম্মাননা দেওয়া হয়। তবে অনেকেই এই পুরস্কার সম্পর্কে খুব ভালো জানেন না। আবার গণিতে নোবেল পুরস্কার কেন দেওয়া হয় না সেই গল্প হয়তো অনেকেরই অজানা। তবে গল্পকে গুজব বলে উড়িয়েও দিতে পারেন! জানা যায়, কোনো এক গণিতবিদের কারণে ভেঙে গিয়েছিল নোবেলের সংসার, তাই প্রতিহিংসাপরায়ণ নোবেল বাদ দিয়েছেন গণিত। বাস্তবে নোবেল কখনো বিয়ে করেননি এবং প্রতিহিংসা তার সঙ্গে যায় না। যদিও গুজবটি মরে না! নোবেলের উইলে গণিতের উল্লেখ না থাকায় নরওয়ের বিখ্যাত গণিতবিদ সোফাস লাই উদ্যোগ নিয়েছিলেন নরওয়ের ক্ষণজন্মা গণিতবিদ নীলস হেনরিক আবেলের নামে অনুরূপ একটি পুরস্কার চালু করার। ইউরোপ থেকে অনুদানের ব্যাপক সাড়াও পেলেন লাই, কিন্তু ১৮৯৯ খ্রিস্টাব্দে তিনি মারা যাওয়ার পর প্রচেষ্টাটি মুখ থুবড়ে পড়ে। ১৯০২ খ্রিস্টাব্দে আবেলের জন্মশতবর্ষ উদ্যাপনকালে সুইডেন-নরওয়ের রাজা দ্বিতীয় অস্কার আবেলের সম্মানার্থে একটি পুরস্কারে আগ্রহী হন। ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে সুইডেন-নরওয়ের মধ্যকার রাষ্ট্রীয় সংঘের সমাপ্তি ঘটলে এ উদ্যোগটিও বাতিল হয়ে যায়। কারণ ইউরোপীয় অনুদান সত্ত্বেও নরওয়ের সেসময়কার অর্থনৈতিক দরিদ্রাবস্থায় এত বড় পুরস্কার চালু করা অসম্ভব ছিল। পরে ২০০৩ সালে নরওয়ে সরকারের অনুদানে এই পুরস্কারটি আবার নিয়মিত প্রদান করা হচ্ছে।
ডিনার করতে গিয়ে ফসকে গেল অস্কার!
চলতি বছরে অস্কার চুরির ঘটনাও ঘটেছে। বাকি ১০ জনের মতো হাসিমুখে সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কারটি হাতে নিয়েছিলেন ফ্রান্সেস ম্যাকডোর্মেন্ড। কিন্তু আসর শেষ না হতেই পুরস্কার উধাও! হইচই ছড়িয়ে পড়ে পুরো লস অ্যাঞ্জেলসে। যিনি পুরস্কার পেয়েছিলেন তিনি ভেঙে পড়লেন। ‘থ্রি বিলবোর্ড আউটসাইড এবিং, মিসৌরি’ সিনেমায় অনবদ্য অভিনয় করে এ পুরস্কার হাতে নিয়েছিলেন তিনি। আর সেই পুরস্কারই কি-না অফিসিয়াল ডিনার করতে গিয়ে ফসকে গেল!
তাত্ক্ষণিক পদক্ষেপ নেয় সেখানকার সিকউরিটি বিভাগ। পুলিশের আপ্রাণ চেষ্টার পরে চোর ধরতে পেরেছেন এবং অভিনেত্রীকে তার অস্কার পদকটি ফিরিয়েও দিয়েছেন। লস অ্যাঞ্জেলসের পুলিশ নিশ্চিত করে বলেছে যে, তারা টেরি ব্র্যায়ান্ট নামের ৪৭ বছর বয়সী একজনকে সন্দেহভাজন হিসেবে আটক করে। অস্কারের অফিশিয়াল ফরমাল ডিনারের একজন টিকেটধারী ছিলেন ব্রায়ান্ট।
২০ হাজার ডলারের বিনিময়ে আপাতত তাকে জামিন দেওয়া হলেও তার মাসখানেক পরই তাকে আদালতে হাজির করা হয়। জানা যায়, সেই মামলা এখনো চলছে।
রাশিয়া বিশ্বকাপও বাদ যায়নি!
এই বিশ্বকাপের ফাইনাল মঞ্চেও ঘটেছে হাসিমুখে ঘটানো এক চুরির ঘটনা! সেদিনের জাঁকালো বৃষ্টির দৃশ্যটি হয়তো আপনার চোখে এখনো ভাসছে। ফরাসিদের এমন আনন্দের দিনে ক্রোয়েশিয়ার খেলোয়াড়দের কান্নার সঙ্গে শুরু হয় তুমুল বৃষ্টি। বৃষ্টি বিঘ্নিত সেই পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানেই অভিযোগ উঠেছে পদক চুরির। বিশ্বকাপের ফাইনাল শেষে একটি ভিডিও ভাইরাল হয়।
সেই ভিডিওতে দেখা যায়, ফ্রান্সের ফুটবলার, কোচ এবং সাপোর্ট স্টাফদের পদক দেওয়ার সময়, পুরস্কার মঞ্চে থাকা এক ভদ্রমহিলা একটি পদক নিজের পকেটে ঢুকিয়ে রাখছেন। তবে সেটা ইচ্ছে করে নাকি, বৃষ্টিতে ভিজে যাওয়ার শঙ্কা থেকে পকেটে পদক রাখলেন তা নিয়ে রয়েছে সংশয়। বিশ্বকাপ ফুটবলের সেই পুরস্কার বিতরণী মঞ্চে ছিলেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন, ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রো আর ক্রোয়েশিয়ার প্রেসিডেন্ট কোলিন্দা গ্রাবার-কিতারোভিচ। পুরস্কার মঞ্চে থাকা সেই মহিলার পরিচয় জানা যায়নি।
রবীন্দ্রনাথ পেলেন নকল রেপ্লিকা!
২৫ মার্চ ২০০৪, বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা ১৫ মিনিট। সপ্তাহের অন্যদিনগুলোর মতো এ দিনেও কর্ম চাঞ্চল্যে মেতে উঠেছিল শান্তিনিকেতন। ছাত্ররা ক্লাস করছে, কর্মচারীরাও যে যার কাজে ব্যস্ত। ব্যস্ততার মধ্যেই হঠাত্ সবার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ল একটা খবরে, রবি ঠাকুরের ‘নোবেল চুরি’! খবর শুনে সবাই ছুটলো উত্তরায়ণের দিকে। গিয়ে সবাই হতবাক! শুধু নোবেল কেন, কবিগুরুর অনেক ব্যবহার্য জিনিসপত্র উধাও! এ উত্তরায়ণই আজ রবীন্দ্র সংগ্রহশালা। সংগ্রহশালার কর্মচারীরা যখন ভবনের দ্বার খুলে দেন তখনই সবার চোখে পড়ে ব্যাপারটা। শুরু হয় হৈচৈ। গোটা রবীন্দ্রভবন ঘিরে ফেলে পুলিশ। ততোক্ষণে বড্ড দেরি হয়ে গেছে। সেখান থেকে চুরি হয়ে গেছে রৌপ্য পদক, ঔঁ লেখা সোনার আংটি, জামার সোনার বোতাম, কাফ লিঙ্ক, মৃণালিনী দেবীর শাড়ি, সোনা বাঁধানো নোয়া, নোবেল পুরস্কারের পদক রূপার রেকাবি, রূপার কফি কাপ, সামুরাই তরবারি, কফি কাপ রাখার তেপায়া, চৈনিক চামুচ, কোবে শহর থেকে পাওয়া হাতির দাঁতের ঝাঁপিসহ আরো ৩৭টি জিনিস। আজো খুঁজে পাওয়া যায়নি কবির পদকও। তবে নোবেল কমিটি একটি ডুপলিকেট রেপ্লিকা দান করেছে। ১৯১৩ সালে ‘গীতাঞ্জলি’ লিখে এই পুরস্কারটি কবিগুরু পেয়েছিলেন। পদকটি রাখা হয়েছিল কবির নিজের হাতেগড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শান্তিনিকেতনের বিশ্বভারতীর রবীন্দ্র জাদুঘরে। কিন্তু নিরাপত্তার ঢিলেমির সুযোগে বাঙালি হিসেবে পৃথিবীর বুকে প্রথম স্বীকৃতির এই সোপান চিহ্ন নোবেল পদকটি খোয়া যায়। এখনো তদন্ত চলছে। তবে নকল রেপ্লিকা পেয়ে খানিকটা শান্ত শান্তিনিকেতন!