জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনান মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের নিয়ে তার আগের বক্তব্য থেকে ফিরে এসেছেন। তিনি বলেছেন, রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে যা চলছে তাকে তিনি ‘গণহত্যা’ বলতে চাননি। তিনি মনে করেন, সেখানে উত্তেজনা ও সংঘর্ষ চলছে। তিনি বলেন, আমি আগে যা বলেছি ঠিক সেভাবে কথাগুলো বলতে চাইনি। রাখাইন রাজ্যে ঘুরে এসে বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাত্কারে তিনি এসব কথা বলেন।
সম্প্রতি কফি আনান বলেছিলেন, মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে যে নির্যাতন চলছে তা ‘গণহত্যা’। মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাকও একই কথা বলে এর তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। মানবাধিকার গ্রুপগুলো বলছে, প্রায় ২১ হাজার রোহিঙ্গা গত দুই মাসে বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছে। অবশ্য পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের বেশিরভাগ সময়েই ফেরত পাঠানো হয়েছে। যারা ভাগ্যজোরে ঢুকে পড়েছে তাদের সংখ্যা ওই পরিমাণ হবে। বিভিন্ন খবরে প্রকাশ গত অক্টোবরে সমন্বিত সন্ত্রাসী হামলায় মিয়ানমারের ৯ সীমান্ত পুলিশ নিহত হওয়ার পর রাখাইন রাজ্যের উত্তরাঞ্চলে রোহিঙ্গাদের ওপর চড়াও হয় সেনাবাহিনী। মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, সেখানে চরম মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে। গুলি করে মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। ঘর-বাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এমনকি সেখানে ধর্ষণের মতো জঘন্য অপরাধের ঘটনাও ঘটেছে। রোহিঙ্গাদের অভিযোগ, নির্বিচারে তাদের হত্যা করা হচ্ছে। সেনাবাহিনীর নির্মম হামলার শিকার হচ্ছে তারা। তবে মিয়ানমার সরকার তাদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করেছে। এমন পরিস্থিতিতে অং সান সু চি গত আগস্টে রাখাইন রাজ্যের বিরাজমান অস্থিতিশীলতা নিয়ে একটি কমিশন গঠনের কথা বলেন। এরপর রাখাইন রাজ্য পরিদর্শনে যান কফি আনান। সেখানে থেকে ফিরে এসে কফি আনান বিবিসির সাংবাদিককে বলেন, ‘আপনাকে ভীত-সন্ত্রস্ত দুই সম্প্রদায়ের কথাই (বৌদ্ধ ও মুসলমান) ভাবতে হবে। উভয়ের মাঝেই সেখানে ভীতি এবং অবিশ্বাস বিরাজ করছে। এ অবস্থা দিনে দিনে শুধুই বাড়ছে। আমাদের এই অবস্থা থেকে উত্তরণের পথ খুঁজতে হবে। দুটি সম্প্রদায়েরই সহ-অবস্থান তৈরিতে কাজ করতে হবে। তাদের মাঝে সাহস যোগাতে হবে। একপর্যায়ে তিনি বলেন, পর্যবেক্ষকদেরও ‘গণহত্যা’ শব্দটি ব্যবহারে সাবধান হওয়া উচিত।
এদিকে মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে ব্যাপক নির্যাতনের কারণে নোবেল জয়ী অং সান সু চি কঠোর সমালোচনার মুখে পড়েছেন। অনেকেই বলেছেন, শান্তির জন্য যে নোবেল পুরস্কার সে শান্তি না থাকলে তার নোবেল পুরস্কার ফিরিয়ে দেওয়া উচিত। কফি আনান অবশ্য এক্ষেত্রে কিছুটা সময় দেওয়ার পক্ষপাতী। তিনি বলেছেন, ঐতিহাসিক বিজয়ের মধ্য দিয়ে দেশটিতে সু চি সরকার যে ক্ষমতায় এসেছে, তাই তাকে কিছুটা সুযোগ ও আমাদের ধৈর্য ধারণ করা উচিত।