ইউরোপীয় ফুটবল মৌসুম শুরু হতে আরও বাকি বেশ কিছুদিন। এই সময়ে বড় দলগুলো তো বটেই, পছন্দের খেলোয়াড়টিকে ক্লাবে টেনে নিয়ে দল গোছানোর কাজ সেরে নিচ্ছে ছোট দলগুলোও। সাধারণত মৌসুম শেষ হবার পরপরই নতুন খেলোয়াড় দলে ভেড়ানোর তোড়জোড় শুরু হয়ে গেলেও এবার বিশ্বকাপের কারণে মাঝে কিছুদিন থিতিয়ে ছিল দলবদলের আমেজ। বিশ্বকাপের পর আবারো শুরু হয়েছে দলবদলের তোড়জোড়।
তবে ইউরোপীয় দলবদলের উন্মাদনা-উত্তেজনার অনেকটাই থমকে গেছে মাদ্রিদ তারকা ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর জুভেন্টাসে পাড়ি দেওয়ার মধ্য দিয়ে। আগের মৌসুমে চ্যামিপয়ন্স লিগ ফাইনালের পরপরই আভাস দিয়ে রেখেছিলেন মাদ্রিদ ছাড়ার। বিশ্বকাপের দ্বিতীয় পর্ব থেকে পর্তুগালের বিদায়ের পরে তার দলবদল নিয়ে ঘোষণা দেওয়ার জন্য বিশ্বকাপ শেষ হবার অপেক্ষাটি করেনি জুভেন্টাস এবং রিয়াল মাদ্রিদ কর্তৃপক্ষের কেউই। তবে রোনালদো মাদ্রিদ ছেড়ে জুভেন্টাসে গিয়েছেন রাজার হালতেই। তাকে দলে টানবার জন্য তুরিনের এই ক্লাবটিকে গুনতে হয়েছে ১১ কোটি ২০ লক্ষ ইউরো। যার ফলে গঞ্জালো হিগুয়েইনকে পেছনে ফেলে পর্তুগীজ অধিনায়ক বনে গেছেন দলটির ইতিহাসের সবচেয়ে দামী ফুটবলারও।
আগের মৌসুমে নেইমারকে রেকর্ড পরিমাণ অর্থে দলে টানার ফলে উয়েফার ফিনানশিয়াল ফেয়ার প্লের চোখ রাঙানির মুখে পড়ে ফরাসি ফুটবল পরাশক্তি প্যারিস সেইন্ট জার্মেই (পিএসজি)। সেবার তাই ফরাসি ফরোয়ার্ড কিলিয়ান এমবাপেকে মোনাকো থেকে ধারে দলে টেনে রেখেছিল তারা। তবে সে চুক্তিতে বলা ছিল পরের মৌসুমেই ১৮ কোটি ইউরোর বিনিময়ে এমবাপেকে কিনে নেবে পিএসজি। মৌসুম শুরু হবার সঙ্গে সঙ্গে আর দেরি করেনি ক্লাবটি। উল্লিখিত অঙ্কের বিনিময়ে দলে ভিড়িয়েছে বিশ্বকাপ মাতানো এই তারকাকে।
দলবদলের বাজারে পরের চমকটি নিয়ে আসে লিভারপুল। আগেরবার রোমার গোলবারের নিচে দারুণ এক মৌসুম কাটিয়ে বিশ্বকাপেও অসাধারণ সময় কাটানো গোলরক্ষক এলিসন বেকারকে রেকর্ড দামে দলে টেনে নিয়েছে গেলবারের চ্যামিপয়ন্স লিগ ফাইনালিস্টরা। ৭ কোটি ২০ লক্ষ ইউরোর বিনিময়ে লিভারপুলে যোগ দিয়ে ইতিহাসের সবচাইতে দামী গোলরক্ষক বনে গেছেন এই ব্রাজিলীয় ফুটবলার। এর আগে ২০০১ সালে পার্মা থেকে ৫ কোটি ৩০ লক্ষ ইউরোর বিনিময়ে জুভেন্টাসে যোগ দিয়ে সবচেয়ে দামী গোলরক্ষক হয়ে ছিলেন ইতালির কিংবদন্তি গোলরক্ষক জিয়ানলুইজি বুফন।
রোনালদোর প্রস্থানের পর তার শূন্যস্থানটি পূরণে মরিয়া চেষ্টা করছে রিয়াল মাদ্রিদ। দলটির চোখ আছে চেলসির তারকা ফরোয়ার্ড এডেন হ্যাজার্ড, পিএসজির নেইমার এবং টটেনহাম ফরোয়ার্ড হ্যারি কেইনের উপর। তবে নেইমার কিছুদিন আগেই দল ছাড়ার সব গুঞ্জন নাকচ করে দিয়েছেন। টটেনহামও গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়দের ধরে রাখতে বদ্ধপরিকর। ফলে শেষমেশ হ্যাজার্ডকেই বার্নাব্যুর তারকা হিসেবে দেখা যায় কিনা এ প্রশ্নের জবাব পেতে অপেক্ষা করতে হবে আরো বেশ কিছুদিন।
রোনালদোর লা লিগা ছাড়ার ঘোষণায় সম্পূরকভাবে আরেকটা খবর ঘুরে বেড়াচ্ছে স্প্যানিশ গণমাধ্যমে। তা হচ্ছে, রোনালদোর পথ ধরে নাকি স্পেন ছাড়তে পারেন বার্সেলোনা তারকা লিওনেল মেসিও। সম্ভাব্য গন্তব্য হতে পারে ইন্টার মিলান। মেসির বার্সা ছাড়ার খবরটি অমূলক মনে হলেও গেল গ্রীষ্মকালীন দলবদল মৌসুমে নেইমারের বার্সেলোনা ছাড়ার ঘটনা এখন আর কোনো খবরেই বিশ্বাস রাখার অবকাশ রাখেনি। তাই, চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর দেখানো পথ যদি ‘নতুন চ্যালেঞ্জের’ খোঁজ করে বসলেও করতে পারেন মেসি।
ইত্তেফাক/মোস্তাফিজ